বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেজর সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে বোনের মামলা

ডেস্ক নিউজ : পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬) নিহতের ঘটনায় মামলা করতে কক্সবাজারে পৌঁছেছেন তার বোন শারমিন শাহরিয়ার।

বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে এসে একটি মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সামনে পৌঁছান তিনি।

তারা বর্তমানে অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফার চেম্বারে অবস্থান করছেন। সেখানে মামলার কাগজ প্রস্তুত হলে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করবেন বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে পরিবারের আরও অন্য সদস্যরাও রয়েছেন।

এর আগে নিজস্ব প্রাইভেটকারে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার সময় ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

এদিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তকাজ শুরু করেছে। সিনহা মো. রাশেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার মা নাসিমা আক্তারকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, সিনহা মো. রাশেদের বাড়ি যশোরের বীর হেমায়েত সড়কে। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ খান অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন। ৫১ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেছিলেন সিনহা রাশেদ।

২০১৮ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ভ্রাম্যমাণ এক ব্যবসায়ী জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে একটি প্রাইভেটকার পৌঁছলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ব্যারিকেড দেন।

এ সময় হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে আসেন একজন (সিফাত)। এর পর নিজের পরিচয় দিয়ে হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামেন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ। তিনি নামার সঙ্গে সঙ্গে কোনো জিজ্ঞাসা না করেই গুলি ছোড়েন লিয়াকত আলী। মুহূর্তেই সিনহা রাশেদ মাটিতে ঢলে পড়েন।

একপর্যায়ে ১০-১২ মিনিট পর সাদা নোয়াহ (মাইক্রোবাস) যোগে ঘটনাস্থলে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ উপস্থিত হন। কয়েক মিনিট পর একটি মিনি ট্রাকে (পিকআপ) সিনহা রাশেদকে তুলে কক্সবাজারের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন ওসি।

ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হামিদ আরও বলেন, ‘আমার চোখের সামনে ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা কখনও ভোলার নয়।’

তবে পুলিশের ভাষ্য ভিন্ন। পুলিশ বলছে, চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সিনহা রাশেদ বাধা দেন। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে রাশেদ পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর গেস্ট হাউসে সিনহার কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বিদেশি মদ ও গাঁজা উদ্ধার করে।

এ ঘটনার পর কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শামলাপুরের লোকজন ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেয়।

এ সময় চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু গাড়ির আরোহী পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়।

এতে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই সিনহা রাশেদের মৃত্যু হয়েছিল। শনিবার সকালে তার ময়নাতদন্ত হয়েছে। তার বুক ও পিঠে জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়।

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে সমন্বয়সভা করেছেন।

এ সময় কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপপুলিশ মহাপরিদর্শকের মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাকির হোসেন, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের মনোনীত লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. শাহাজান আলী উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরো খবর